আতঙ্ক, মহামারি, অবরুদ্ধ চারপাশে আটকে গেছে ধ্বংসালী মনবতা। সাড়ে তিন হাত দূরের এই বিশেষণ তল কি ভীষণ ভাবেই না আগলে ধরছে মৃত লাশ।সময় অসময়ের দীর্ঘসূত্রতায় আরও দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের শারি। ভাই, ভাইয়ের সম্পর্কে সৃষ্টি হয়েছে কাঠের দেয়াল, আকস্মাৎ থমকে গেছে জনতা, ঘরবন্ধি হয়েছে কোটি কোটি শ্রমবাহিনী শরীর। হ্যাঁ, করোনা ভাইরাস, একটি আতঙ্ক, ভয় আর বিস্ময়ের নাম! মহাকাশজয়ী উচ্চতর বিজ্ঞান, বহুবছরের ভূবন বিখ্যাত চিকিৎসা সাস্ত্র আর তাবুত পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞানবিদ সবাই ব্যর্থ এক সামান্য করোনায়। হাজার মাইল বেগে ধেয়ে চলা দ্রুত গতির বুলেট ট্রেনও আজ অচল। কোটি টাকার অতি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও মাথা ঠেকিয়েছে এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দুর্বল কিটে। অপন রক্ত ছেড়ে যাচ্ছে আপন হৃদয়, পাশে থেকেও বাড়ছে কাছে থাকার দূরত্ব। এক অজানা অশংকায় ভীতসন্ত্রস্ত পুরো মানব সমাজ। বিশ্বজয়ী, সবুজ পৃথিবীর নিয়ন্ত্রক বলবীর মানুষের কর্তৃত্ব টুটে যাচ্ছে ঘাতক করোনাতেই! এক ভাইরাসেই কুপকাত নাম খেলানো বড় ডাক্তার, দুমড়ে মুচড়ে গেছে নামজাদা চাটুকারদের আমিত্নের দম্ভ! একটু একটু করে হুস ফিরেছে মানবতার প্রাণে। এক করোনায় এসে মিলিত হয়েছে বড়-ছোট, উঁচু - নিচুর বাধা ব্যবধান। আরও একবার স্রষ্টায় বিশ্বাসের প্রয়োজনবোধ জন্মেছে বর্বর, স্বার্থপরায়ণ মানব হৃদয়ে। অহিংসা, ভাতৃত্ব ফের এসেছে মহামারী আতঙ্কের ডেরায়। মানুষ বুঝতে শিখেছে প্রকৃতিবাদ কিংবা প্রকৃতিস্থ নানাবিধ পার্শপ্রতিক্রিয়া।
মৃত্যুবাণে দুর্বার প্রতাপে এগিয়ে চলা করোনাকে থামানো যাচ্ছেনা কোনো ক্রমেই। অবিরাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়িয়ে চলেছে তার শিকারের সংখ্যা। অনিঃশেষ ধেয়ে চলা এই করোনার আজ পৃথিবীময় রাজত্ব। মানুষ মরবেই, মরবে প্রতিবেশিরাও। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে, জেনে না জেনে প্রকৃতির যে ক্ষতি মানবজাতি করেছে, কয়টা লাশে তার প্রায়শ্চিত্ত করবে মানুষ? "নেচার উইল রিভেন্জ" নামক তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বাক্যটা আজ আমাদের গলায় বিঁধেছে মারণকাটা হয়ে। করোনা নামে মানব জাতির গুপণ, প্রকাশ্য সকল অপকর্মের প্রায়শ্চিত্তের যোজন বিয়োজনের চুলচেরা হিসেব নিতেই প্রকৃতির এই অদ্ভুত খেয়াল। প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে, প্রকৃতি বাঁচলেই বেঁচে যাবে মানুষ, রেহাই পাবে করোনা, পূর্ণ হবে প্রায়শ্চিত্ত।
২, ৪, ৮ এর যে গুণত্বের ধারায় অনবরত বেড়ে চলেছে লাশের সংখ্যা, প্রকৃতির যে করুণ খেয়ালে ধসে পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতি, সে করোনাকে রুখে দেবার সাধ্যি আমাদের কোনো কালেই হয়নি। স্রষ্টার অনুগ্রহের বিপরীতেই যে মুক্তি তা আমাদের মেনে নিতেই হবে, মেনে নিতে বাধ্য। তাই আতঙ্কিত নয়, সতর্ক হওয়া প্রয়োজন আমাদের করণীয় কর্মকান্ডে, কর্তব্যে, প্রয়োজনে। জেনে নেওয়া দরকার সঠিক করণীয় কিংবা কোনটা করা উচিৎ। সময় অসময়ের কিছু পছন্দ, সখ, আর ভালো লাগার বলিদান দিতে হবে মানবতার প্রয়োজনে। আত্নসাৎ, স্বার্থসিদ্ধি, চাটুকার, অপচয়, হিংসার নষ্টামি বন্ধ করে কাজ করতে হবে হাতে হাতে, পথে পান্তরে, মাঠে ঘাটে। তাবুত অপকর্ম প্রতিস্থাপিত করতে হবে জীবন রক্ষাকারী মহিমান্বিত গুণে। অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে স্রষ্টার দেওয়া ধর্মীয় বিধি নিশেধ। হাটতে হবে সমবায়, সমান, সমতার পথে। ভুলতে হবে বড় ছোটর বাধা ব্যবধান। কারণ, স্রষ্টা বৈসম্যে বিশ্বাস করেন না। সর্বোপরি, সঠিক পথে চলে নিজ নিজ কর্মগুণে আর্জন করতে হবে ইহলৌকিক ও পরলৌকিক সমৃদ্ধি।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যেকোনো সময়, যে কোনো মুহুর্তে যে কোনো দেশের সাহিত্য, প্রযুক্তি, শিক্ষা, চিকিৎসা, খেলাধুলা বিষয়ে সবার আগে জানতে আমাদের সাথে কানেক্টেড থাকুন। - ধন্যবাদ