বিচারহীন আত্মহত্যাই ধর্ষিতার অন্তীম পরিণতি
সর্বত্রই চলছে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি, একদল খাচ্ছে, নাম পড়ছে অন্য জনের। হালের হিসেবে জিহ্বা বসাচ্ছে নাম না জানা অপরিচিত কেউ। চুরি, লুটপাটে ঘর পূর্ণ করে একেকজন বলে, অ্যাঁ চোরই দেখিনি।
দক্ষিণে লুটতরাজ, বামে ধর্ষণ, পশ্চিমে কূপিয়েছে কেউ। না, কেউ দেখেনি, প্রতিবাদ করেনি, নিরাপদ দূরত্বে বুলি আওড়িয়েছে আরও অনেকেই। ঘাতকের বিচার অব্ধি পৌঁছায়নি ফেইসবুক জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার প্রতিবাদ প্রবাহ। সমাবেশ, প্রতিরোধ ,প্রতিবাদ, মানবতা, আইনকে উপেক্ষা করেই পত্রিকাগুলোর নিত্য নতুন চমৎকৃত বাংলা টাইটেলের মত করে নিত্যদিনই ঘটে চলেছে ধর্ষণ, লুটতরাজ, হত্যার মত অঘটন কিংবা কোন অবাঞ্ছিত ঘটনা।
গেল কয়েক মাসে ১০০ এরও বেশি নারী এবং শিশু ধর্ষিত হয়েছে । কিন্তু সে অনুপাতে বিচার পেয়েছে কজন? কিংবা আদ্বব্ধি হয়ে আসা ধর্ষণেরই বা কজন প্রাপ্য সাজা পেয়েছে? খুব স্বাভাবিক, এই হিসেবটা কোনদিনই মিলেনি আর মিলবেও না।
বোরকায় আটকাচ্ছে না ধর্ষণের পরিধি, একই হারে লাগামহীন ভাবে বেড়েই চলেছে শিশু ধর্ষণও। দেশ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও মানুষ নিজের করে পায়নি প্রত্যাশিত বৈর্ধ অধিকার। ধর্ষণ মহামারিতে দিনের পর দিন বিষিয়ে যাচ্ছে এই মুমূর্ষু বাঙালী। সরকার, আইন, রক্ষক পকেটে রেখে এক ধর্ষকেই কাটা পড়ে নিরাপত্তার মত মৌলিক অধিকার। একটা মেয়ের নিরাপত্তা নেই পরিবারে, রাস্তায়, বাসে কিংবা কোন কর্মপ্রতিষ্ঠানেও। অরাজকতার এই ধর্ষিত দেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ধর্ষর্কের বিষাক্ত চোখ। সমস্যাটা আসলে ঠিক কোথায়? এত কিছুর পরেও কেন ধর্ষণের কমানো সম্ভব হচ্ছে না? কিংবা ধর্ষণ রোধে আমাদের করণীয়টা কী?
আমার চোখে ধর্ষণের মূল কারন ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আইনের দুর্বলতা। হ্যাঁ, ক্ষমতার বলেই পুরষ কর্তৃক ধর্ষিত হয় একজন নারী কিংবা মেয়ে। কারন সে খুব ভালো করেই জানে, ক্ষমতার বলে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে একদিন ঠিকই সে বেড়িয়ে যাবে। সর্বদাই একজন ক্ষমতাবান লোক দ্বারা ধর্ষিত হয় অপেক্ষাকৃত কোন দুর্বল প্রতিপক্ষ। সাংসদীয় আত্মীয় কিংবা দেশ পরিচালনায় পরিবারের কারো উল্লেখযোগ্য অবস্থান, অর্থ সম্পত্তির প্রাচুর্য্য একজনকে ক্ষমতাবান বানিয়ে দেয়, সেই ক্ষমতার ব্যবহারেই ধর্ষক পূর্ণ করে তার অনৈতিক জৈবিক চাহিদা। বিপরীতে অসহায়ত্বের শেকলে আটকে থাকা ধর্ষিতার কপালে জুটে এর চেয়েও বড় সর্বনাশের পূর্বাভাষ। অর্থের দৌরাত্ম্যে বিচারহীন আত্মহত্যা হয় অনেক ধর্ষিতার অন্তীম পরিণতি।
একজন ক্ষমতাবান নারী, ধর্ষকের কাছে আতঙ্কের মত। ধর্ষণ তো দূরে থাক, তাকে ধর্ষকরা সমীহ করে, কারন তারা জানে তার ক্ষমতার ব্যবধি তাদের ঠিক কোথায় নিয়ে যেতে পারে।
নীতিটা খুব সাধারণ, "অপেক্ষাকৃত দুর্বলেরা ধর্ষিত, নিপিড়িত, নির্যাতিত হবে।" শোষণের নীতি রপ্ত করে শাসকের মত ধর্ষকরাও ন্যায়নীতি পায়ে ঠেলে ইংরেজ কিংবা পাকিস্তানি বর্বরদের মত দুর্বলের উপর হামলে পরে।
কারন, এই দেশে আইন থাকলেও আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নেই। যেদেশে একজন সাংসদীয় ব্যক্তির হত্যাকান্ডে জড়ীতদের বিচার হতে দুই যুগেরও বেশি সময় চলে যায় সে দেশে ধর্ষণের বিচার কার্যকর হতে পাঁচ, ছয় যুগ এমনিতেই পেরিয়ে যাবে। ক্ষমতা আর আইনের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে দিনেরপর দিন জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে ধর্ষণের এই নিদারুণ নৈরাজ্য।
ধর্ষকের কোন জাতি নেই, কোন পরিচয় নেই! ধর্ষক হলো, হালের এই কঠিন কালে জন্ম নেওয়া মানুষরূপী বিষধর নর দানব। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণাকে সাধুবাদ জানাই। এরই সাথে স্বল্পতম সময়ে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য আহ্বান করছি। ধর্ষক প্রমাণিত হওয়ার পরিপেক্ষিতে, ১ থেকে সর্বোচ্চ ৭ দিনের মধ্যে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে পারলে অচীরেই ধর্ষণের হার অনেকাংশে কমে আসবে। আইনি জটিলতায় ধর্ষকের বিচার যেন আটকে না যায় সে ব্যাপারে সার্বক্ষণিক নজরদারী সহ বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
তুমি নিপিড়িত, অত্যাচারিত, নিগৃহীত, ধর্ষিত হলে, কেবল ক্ষমতায়িত হওয়ার পরই তুমি বিচার পেতে পার, কিংবা প্রতিপক্ষকে দাঁড়া করাতে পার হিসেবের কাঠগড়ায় । মাটির উপরে তোমার নিরাপত্তা নেই মেয়ে, যদি পার প্রতিরোধ কর। নিজেকে রক্ষায় নিজের সর্বোচ্চটুকু দাও, ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে সশস্ত্রে রুখে দাড়াও। একজন ধর্ষক মরে গেলে দেশের কোনকিছু আসবে যাবে না, তবে তোমাকে কিন্তু পৃথিবীর ভীষণ প্রয়োজন।
লেখক: মো. রাফছান আহমেদ
শিক্ষার্থী, মেরিন সায়েন্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মোবাইল: 01859569175
Email: rafsanraj.cu@gmail.com
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যেকোনো সময়, যে কোনো মুহুর্তে যে কোনো দেশের সাহিত্য, প্রযুক্তি, শিক্ষা, চিকিৎসা, খেলাধুলা বিষয়ে সবার আগে জানতে আমাদের সাথে কানেক্টেড থাকুন। - ধন্যবাদ