ব্যর্থতা ঢাকতে ভাগ্যকে দোষারোপ আর কত?




আমি পারি না বলে আমরা আসলে কি প্রমাণ করতে চাই? আমাদের ব্যর্থতা নাকি চেষ্টায় যাওয়ার অনীহা! অনুকরণপ্রিয় আলস বাঙালি জাতির জন্য যদিও এখন এটা অন্য আট দশটা নিয়মের মত একটা সাধারন প্রথা বনে গেছে। সবাই এখন বিনা পরিশ্রমে সহজপাচ্য রত্নভাণ্ডারের খুঁজে। নিজের বর্তমান পরিস্থিতি কিংবা কর্মফলের জন্য আসলেই কি ভাগ্য দোষী? কপালে নেই নাকি সফলতার বিপরীতে প্রয়োজনীয় চেষ্টাটাই করা হয়নি? 

ভাগ্য বলতে আমি স্রষ্টাকর্তৃক নীতিনির্ধারিত কতগুলো বিষয়কেই বুঝি।  চলেন, কোরআনের আলোকে ভাগ্যের ব্যাখ্যা করা যাক। পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট বলা আছে, ভাগ্য দুই প্রকার!  যার একটা অংশ সষ্টাকর্তৃক নির্ধারিত। সৃষ্টির ধ্বংসের বিপরীতেও এই নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হবে না। যেমন ধরেন আমাদের "মৃত্যু"। আগে পড়ে যখনই জন্ম হোক না কেন, মৃত্যৃর স্বাদ আমাদের প্রত্যেককে নিতেই হবে। হাজার চেষ্টান্তরে এর থেকে রেহাই পাওয়ার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। অপর অংশটা মানুষ কিংবা প্রাণীদের নিজেদের হাতে। যেমন ধরেন, আপনি রান্নার উদ্দেশে বাজার থেকে কিছু জীবিত মাছ এনে একটা ছোট্ট বালতির মধ্যে ছেড়ে দিলেন। এখানে মাছের সর্বশেষ গন্তব্য কিন্তু আপনার প্লেট। কিন্তু বালতিতে কিংবা ছোট্ট গর্তে রেখে দিলে মাছটা ডানে যাবে না বায়ে যাবে উপরে লাফিয়ে উঠবে না নিচে পড়ে থাকবে সেটা কিন্তু মাছের চেষ্টার উপর নির্ভর করে। পরিবেশ অনুকূলে থাকার শর্তে মাছটা চেষ্টা করলে কিন্তু বালতি থেকে লাফিয়ে নিজের  জীবন বাঁচাতে পারে। আবার মাছ কিনে আনার পর আপনার ব্যবস্থাপনাও মাছের সর্বশেষ গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের কাছে ভাগ্যের যে অংশ উন্মুক্ত, মানুষ চাইলেই সে অংশের পরিবর্তন, পরিমার্জন করতে পারে। যেমন ধরেন, আমাদের মৃত্যু অনিবার্য!  কিন্তু বাঁচে থাকার সময়টাতে আমরা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারি। এটা করার জন্য স্রষ্টা আমাদের উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। বালতির পানিতে মাছের গতিপথের মত স্রষ্টাও ঠিক জানেন আমরা কি করছি, কি করব। কিন্তু বালতির মাছের চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে তার অবস্থার পরিবর্তনের মত করে আমরাও কিন্তু চাইলে নিজের অবস্থা, অবস্থানের পরিবর্তন করতে পারি। আপনার অব্যবস্থাপনার সুযোগে মাছের পালিয়ে যাওয়ার মত করে কিছু মানুষের  অব্যবস্থাপনায় সুযোগ পেতে পারে ভিন্ন কিছু মানুষ। যেটা ভুল, যেটা ব্যর্থতা সেটা ভাগ্য হয় কি করে? নিজের কর্মগুণে আমাদের অবস্থানের পরিবর্তনের পথটা অনেকটা মাছের বালতি থেকে পালিয়ে যাওয়ার মত। বেঁচে থাকার সময়টাতে আমরা স্রষ্টার অনুগ্রহে নিজের জীবনের আমূল পরিবর্তন করতে পারি, নিজের জীবনের পরিধির বৃদ্ধির মত করে অনেক ইচ্ছারই পূর্ণতা পেতে পারি। কিন্তু মৃত্যুকে আটকাতে পারিনা! কারন মানুষের অব্যবস্থাপনায় মাছ ছাড়া পেলেও স্রষ্টার খাতায় অব্যবস্থাপনা বলতে কোনো শব্দ নেই। নিঃস্ব থেকে বিশ্ব হওয়া কিংবা বিশ্ব থেকে নিঃস্ব হওয়াও কিন্তু দ্বিতীয় নম্বর ভাগ্যের উদাহরণ, যার নিয়ন্ত্রক স্বয়ং মানুষ নিজেই। একজন পরিশ্রমী মানুষ চাইলে তার ভাগ্যের চাঁকা ১৮০ ডিগ্রি অঙ্গেলে ঘুরিয়ে নিজের অবস্থার পরিবর্তন  করতে পারে। কারো জন্য হয়তো সময় একটু বেশি প্রয়োজন হয় কিংবা কারোর জন্য কম। 

তো? চেষ্টার ব্যতিরেকে নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে নিজের ভাগ্যকে শুধু শুধু কেন দুষছেন? নিজের বিবেকের আদালতে আমরা নিজেরাই সবচেয়ে বড় অপরাধী! সফলতা কোনো সহজপাচ্য বিষয় নয় যে ইচ্ছে করলেই তার সাক্ষাৎ পাওয়াা সম্ভব! সঠিক নিয়মে যথাযথ উপায়ে কর্মপরিকল্পনা সাজালে নিশ্চই সফলতা ধরা দিবে। আমি পারি না, করি না, পড়ি না, জানি না, বলি না, যাই না থেকে না শব্দটা বাদ দিয়ে দিন প্রথমে। পরি না বলার বিপরীতে বলেন পারি, পারব, কেন পারব না? আমাকে পারতেই হবে! অথর্ব, অলস, কাপুরুষ বাঙালি হয়ে বেঁচে না থেকে নিজের প্রতিভাকে প্রকাশ করার জন্য পরিশ্রম করুণ। কর্মগুণে স্বার্থক করুণ আপনার জন্মের উদ্দেশ্য। সত্যি বলছি, কারো কাছে অনুগ্রহের ভিক্ষা কখনোই চাইতে হবে না, সমুন্নত মাথাটা নিচু হবে না, ব্যর্থতার বিপরীতে শুনতে হবে না অশ্রাব্য কোনো শব্দ।

লেখক নিজস্ব প্রতিবেদক

মো. রাফছান একজন লেখক, কলামিস্ট, সংগঠক ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স-এর শিক্ষার্থী এবং তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চবি-র প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে তরুণদের সঙ্গে কাজ করছেন। সঠিক তথ্য, সচেতনতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সমতা ও মানবিকতা-ভিত্তিক সমাজ গড়াই তাঁর মূল উদ্দেশ্য।

0 Comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যেকোনো সময়, যে কোনো মুহুর্তে যে কোনো দেশের সাহিত্য, প্রযুক্তি, শিক্ষা, চিকিৎসা, খেলাধুলা বিষয়ে সবার আগে জানতে আমাদের সাথে কানেক্টেড থাকুন। - ধন্যবাদ